শীতকালে চামড়ার মোজা পরিধান করার উপকারিতা

এই শীতে চামড়ার মোজা ব্যাবহারে আপনি পাবেন নানান রকম সুবিধা। শীতকালে চামড়ার মোজা ব্যবহার করলে আপনার পা গুলো থাকবে গরম। বিশেষ করে একটু বয়স্ক মানুষদের জন্য চামড়ার মোজা খূবই উপকারী। শীতকালে ফ্লোরের ঠান্ডা থেকে পা দুটিকে বাঁচাতে পারবেন। একবার অজু করে করে মোজা পরিধানের পরটানা ২৪ ঘন্টা অজু করার সময় শুধু মোজার উপর মাসেহ করে নিলেই হয়ে যাবে। পায়ে পানি লাগানো লাগবে না। রাতের বেলায় মোজা পরে ঘুমালে পায়ে শীত অনুভূত হবে না। আর এই শীতে সফরে বের হলে চামড়ার মোজা ব্যাবহার আপনাকে দেবে অনেক আরাম।

চামড়ার মোজা পরিধান করার উপকারিতা

  • রাতে ঘুমানোর সময় পা-ঢাকার জন্য এবং ঘরে, অফিসে অথবা মসজিদের ঠান্ডা ফ্লোরে হাঁটাচলার জন্য এটি খুবই আরামদায়ক ।
  • ঠান্ডা পানিতে অজু করার সময় এই মোজা না খুলে শুধুমাত্র ভেজা হাতে মোজার উপরে মাসেহ (হাত বুলানো) করলেই পা ধোয়ার ফরয হুকুম আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সা:) এই আমলটি করেছেন।
  • সফরের সময় এই মোজা পড়েই নিশ্চিন্তে নামাজ পড়া যাবে।
  • চেইন ও ভেলক্রো লক সিস্টেম থাকায় সহজেই আরামদায়ক ভাবে পরিধান করা যাবে।
  • যাদের নিউমোনিয়া বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী।
  • ডায়াবেটিক রোগীদের পা ঢেকে রাখার জন্যও উপকারী।
  • শীতকালে যাদের পা ফাটে তাদের জন্য খুবই উপকারী।
  • চামড়ার মোজা অফিসিয়াল জুতার সাথে পরার উপযোগী না কিন্তু বাসায় ব্যবহার করার স্যান্ডেলের সাথে সহজেই ব্যবহার করা যাবে।

মোজার উপর মাস্হ করা

মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। ‘জাওরাব’-এর উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাসহ করেছেন কিনা সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো সাহাবী তা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ‘জাওরাব’-এর উপর মাসহ করা বৈধ নয়। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদের মতে ‘জাওরাব’ যদি পুরু হয়, পায়ের চামড়া প্রকাশ না করে তবে তার উপর মাসহ করা বৈধ। ইমাম যাইলায়ী উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আযম মৃত্যুর পূর্বে নিজ মত পরিত্যাগ করে তাঁর ছাত্রদ্বয়ের মত গ্রহণ করেন।[1]

পক্ষান্তরে বহুসংখ্যক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ওযু অবস্থায় চামড়ার মোজা পরিধান করা হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওযূ করার সময় মোজা না খুলে মোজার উপর আদ্র হাত বুলিয়ে মুছে নিতেন বা মাস্হ করতেন। তিনি স্বগৃহে অবস্থানকারীর জন্য ২৪ ঘণ্টা এবং মুসাফিরের জন্য ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত এরূপ মাস্হ করার অনুমতি দিয়েছেন।

এখানে ইমাম আবূ হানীফা বলেছেন যে, খুফ্ফ বা চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করা সুন্নাত। ওসিয়্যাহ গ্রন্থে তিনি একে ওয়াজিব বলেছেন। তিনি বলেন:

وَنُقِرُّ بِأَنَّ الْمَسْحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ وَاجِبٌ لِلْمُقِيْمِ يَوْماً وَلَيْلَةً، وَلِلْمُسَافِرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهَا؛ لأَنَّ الْحَدِيْثَ وَرَدَ هَكَذَا، فَمَنْ أَنْكَرَهُ فَإِنَّهُ يُخْشَى عَلَيْهِ الْكُفْرُ؛ لأَنَّهُ قَرِيْبٌ مِنَ الْخَبَرِ الْمُتَوَاتِرِ.

‘‘নিজ গৃহে অবস্থানকারী বা মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত ও মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত্রি মোজার উপর মাস্হ করা ওয়াজিব বলে আমরা স্বীকার করি। কারণ হাদীসে এরূপই বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ তা অস্বীকার করে তবে তার কাফির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ তা মুতাওয়াতির হাদীস হওয়ার নিকটবর্তী।’’[2]

অর্থাৎ, মোজার উপর মাস্হ করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবন-পদ্ধতি ও ইবাদত পদ্ধতির অংশ। তিনি যেভাবে যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে তা করেছেন, সেভাবে ততটকু গুরুত্ব দিয়ে তা গ্রহণ করা সুন্নাত। একে সুন্নাহ নির্দেশিত বৈধ কর্ম হিসেবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। মোজার উপর মাস্হ না করলে গোনাহ হয় না। তবে মাস্হ না করে মোজা খুলে পা ধোয়াকে বেশি তাকওয়া মনে করা বা মাস্হ করাকে না-জায়েয মনে করা একটি বিদআত বা নব-উদ্ভাবিত বিশ্বাস। এরূপ আকীদা পোষণকারী সুন্নাহ নির্দেশিত ওয়াজিব আকীদা পরিত্যাগের জন্য পাপী।

[1] মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মাবসূত ১/৯১; যাইলায়ী, তাবয়ীনুল হাকায়িক ১/৫২।

[2] ইমাম আবূ হানীফা, আল-ওয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৭৮।

(তথ্য: https://www.hadithbd.com/books/link/?id=7205)

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Main Menu